ভারতে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে আজও থমথমে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ। একদিন আগেই পুলিশের গাড়িসহ অসংখ্য যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, রেললাইনে অবরোধ, তৃণমূল বিধায়কের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। এ ঘটনায় অন্তত ১১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী আইনে ক্ষুব্ধ ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমরা। ধর্মবিশ্বাসের জেরে নিপীড়নের নতুন অস্ত্র হিসেবে আইনটির ব্যবহার নিয়ে আতঙ্কিত তারা।
আইন প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম অধ্যুষিত জেলা মুর্শিদাবাদ। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, দুর্নীতি দমনে আইন সংশোধনের নামে মুসলিমদের স্থাবর সম্পত্তি দখলে নিতে চাইছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার।
এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘যেভাবে আগে এদেশে ওয়াকফ চলছিল, তাতে কোনো ধর্মের কোনো সমস্যা না করে ওয়াকফ বোর্ড এদেশে নিজেদের কবরস্থান, মসজিদ, মাদরাসার দেখভাল করছিল। জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে এতে নতুন আইন আরোপ করে মুসলিমদের সম্পত্তি কব্জায় নেয়ার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি আমরা। কোনো অবস্থাতেই এ আইন আমরা মানবো না।’
শুরুতে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও সন্ধ্যা গড়ানোর সাথে সাথে হয়ে ওঠে সহিংস। পুলিশের গাড়িসহ বিপুল সংখ্যক যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, জাতীয় সড়ক ও রেলপথে অবরোধ, দোকানপাটে লুটপাট, এমনকি স্থানীয় তৃণমূল বিধায়কের কার্যালয়েও হয় ভাঙচুর। পরে নাশকতার অভিযোগে শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জোরদার করে নিরাপত্তা। শনিবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও থমথমে সুতি, শমসেরগঞ্জ এলাকা। বিষয়টিকে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ আখ্যা দিয়ে রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ ও সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছে বিজেপি।ইসলাম ধর্মে প্রচলিত বিশ্বাসে ওয়াকফ হলো মুসলিমদের দাতব্য বা ধর্মীয় অনুদান, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণে ব্যবহার করা হয়। অন্য কোনো কাজে এ ধরনের সম্পদ ব্যবহারের, বিক্রির বা মালিকানা হস্তান্তরের অনুমতি নেই। দেড়শ' কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের সংখ্যালঘু ২০ কোটি মুসলিমের জন্য ওয়াকফ জরুরি, কারণ তাদের মসজিদ-মাদরাসা-কবরস্থান ও এতিমখানা পরিচালিত হয় ওয়াকফ দেশটির কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের মাধ্যমে।
এতকাল ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের মাধ্যমে রাজ্য পর্যায়ে বোর্ড বা পরিষদ গঠনের মাধ্যমে চলছিল এসব সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ, যেখানে প্রথমবারের মতো অমুসলিমদেরও ওয়াকফ পরিচালনায় যুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে সংশোধিত আইনে।
আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিজেপি সরকার ওয়াকফ প্রশাসনের আধুনিকায়ন এবং আইনি ফাঁকফোকর দূর করার কথা বললেও সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য এটি অধিকার খর্বের কৌশল, বলছেন ভুক্তভোগীরা।